বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগে জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, আজ বুধবার অনুষ্ঠিত ৪৯তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, সব বিভাগে বাংলাদেশ স্টাডিজ কোর্সে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস একটি অধ্যায় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্য জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা মো. ইলিয়াছ প্রামাণিক জুলাই অভ্যুত্থান ২০২৪-কে সব বিভাগে বাংলাদেশ স্টাডিজ কোর্সের একটি অধ্যায় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন। এ নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা শেষে সভায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামী সেশন থেকে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শওকত আলী বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবু সাঈদ জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন। এই ইতিহাস যেন আগামী প্রজন্ম ভুলে না যায়, সে জন্য পাঠ্যক্রমে একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত হবে; যাতে শিক্ষার্থীরা সমকালীন ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হবে। একই সঙ্গে জাতীয় চেতনা ও বীরত্বের মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পারবে।’
এই পাঠ থেকে শিক্ষার্থী রা বুঝবে তাদের মূল্য এই দেশে কতটুকু। তারা নিজেরাই বুঝতে পারবে কিভাবে দেশ কে এগিয়ে নিতে হবে।কিভাবে সব সৈরাচার কে দেশ থেকে বের করবে।
উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীর একাডেমিক এবং নৈতিক শৃঙ্খলার তত্ত্বাবধান ও রক্ষার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হলের সিট বাণিজ্য, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হতে পারবে না। কেউ যদি এখনো যুক্ত থাকে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় গেজেট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হলো- যেসকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিগগিরই মামলা রুজু করা হবে। যেসকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী কর্মস্থলে অনুপস্থিত তাদের ছুটি মঞ্জুর না করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক, ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৭২ জন শিক্ষার্থী অভিযুক্ত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিধি অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরমধ্যে যে সকল শিক্ষার্থী ছাত্রত্ব শেষ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হবে। আর যাদের ছাত্রত্ব আছে তাদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কও ছিলেন তিনি। গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। এরপর সারা দেশে আন্দোলন বেগমান হয়ে ওঠে এবং গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়। এরপর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বন্ধের দাবি ওঠে।
One thought on “বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস”
Comments are closed.