বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের অর্থ কী?
হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বড় পরিবর্তন হতে চলেছে। কারণ বিশ্বে বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধ এবং অনিশ্চয়তার ফলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে আমূল পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি তিনি ইতিমধ্যেই দিয়েছেন।
নির্বাচনি প্রচারাভিযানের সময় নীতি বিষয়ক বহু প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা গিয়েছে মি. ট্রাম্পকে।
যদিও সেখানে এই নীতির বিষয়ে বিশদ বিবরণের অভাব ছিল। ‘হস্তক্ষেপহীন’ এবং ‘বাণিজ্য সুরক্ষাবাদের’ নীতির উপর ভিত্তি করেই নানা প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা গেছে তাকে। এই নীতিকে মূলত ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
বহু বছরের ‘সমান্তরাল সংকটের’ আবহে ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সম্ভাব্য বাধাগুলোর একটার সম্মুখীন হতে চলেছে, তারই ইঙ্গিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নির্বাচনি জয়।
নিচ্ছে বলেও অতীতে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
তবে ন্যাটো থেকে সত্যিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেবেন কি না সেটা একটা বিতর্কের বিষয়। কিন্তু যদি তা হয়, তাহলে সেটা প্রায় শতাব্দী প্রাচীন ট্রান্স-আটলান্টিক প্রতিরক্ষা সম্পর্কের বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের একটা ইঙ্গিত হবে।
এদিকে, (মি. ট্রাম্পের) কিছু মিত্রদের মতে তার এই কড়া অবস্থান ন্যাটোর সদস্যদের জোটের প্রতিরক্ষা ব্যয় সংক্রান্ত নির্দেশিকা পূরণ করানোর জন্য দরকষাকষির কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।
কিন্তু বাস্তবে, তার এই জয় ন্যাটোর ভবিষ্যতের জন্য কী বার্তা বয়ে আনে এবং ‘হস্টাইল’ নেতারা (বিদ্রোহী নেতারা) এর ‘নেতিবাচক’ প্রভাবকে কীভাবে দেখবেন, এই বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন জোটের নেতারা।
মধ্যপ্রাচ্য
ইউক্রেনের মতোই, মধ্যপ্রাচ্যে ‘শান্তি’ আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর অর্থ হলো তিনি গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এবং লেবাননে ইসরাইল-হেজবুল্লাহ যুদ্ধের ইতি টানবেন। কিন্তু তা তিনি কীভাবে করবেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।
তিনি বারবার দাবি করেছেন, জো বাইডেনের পরিবর্তে যদি তিনি ক্ষমতায় থাকতেন তাহলে ইরানের (যারা হামাসকে অর্থায়ন করে) উপর তার (ডোনাল্ড ট্রাম্পের) ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতির কারণে হামাস ইসরায়েল আক্রমণ করত না।
অনুমান করা যায় ক্ষমতায় এসে তার দ্বিতীয় মেয়াদেও মি. ট্রাম্প সেই নীতিই মেনে চলার চেষ্টা করবেন যার ভিত্তিতে তার প্রশাসন ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে এনেছিল।
ইরানের উপর বৃহত্তর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল এবং ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করেছিল।
প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন ডোনাল্ড ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে ইসরায়েল-পন্থী নীতি প্রণয়ন করেছিলেন। তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেমে স্থানান্তর করেন তিনি। তার এই পদক্ষেপ খ্রিস্টান ‘এভাঞ্জেলিকাল’দের উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল। রিপাবলিকানদের ভোটার বলে বিবেচিত হয় এই গোষ্ঠী।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মি. ট্রাম্পকে “ইসরায়েলের সবচেয়ে ভালো বন্ধু যেমনটা ইসরায়েল হোয়াইট হাউজে আগে কখনও পায়নি” বলে মন্তব্য করেছেন।
এদিকে, ফিলিস্তিনিরা ট্রাম্প প্রশাসনকে বয়কট করেছিল। কারণ ফিলিস্তিনিদের জাতীয় ও ধর্মীয় জীবনের ঐতিহাসিক কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও জেরুজালেমের প্রতি তাদের (ফিলিস্তিনিদের) দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি ওয়াশিংটন।
ফিলিস্তিন আরও ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়ে যখন ট্রাম্প তথাকথিত ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর মধ্যস্থতা করেছিলেন যাকে ইসরায়েল এবং বেশ কয়েকটা আরব ও মুসলিম দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য একটা ঐতিহাসিক চুক্তি হিসাবে দেখা হয়।
এই মধ্যস্থতার সময় শর্ত হিসাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ফিলিস্তিনকে মেনে নিতে হয়নি। এর পরিবর্তে, এই চুক্তিতে সামিল দেশগুলো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিনিময়ে উন্নত মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের সুবিধা পেয়েছিল।
ধীরে ধীরে আরও কোণঠাঁসা হয়ে পড়ে ফিলিস্তিন।
One thought on “বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের অর্থ কী?”
Comments are closed.